Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

হাটশ হরিপুরের ইতিহাস

হাটশ হরিপুরের ইতিহাস



আমাদের এই ইউনিয়নটিতে কবে কিভাবে বসতি স্থাপিত হয়েছিল তা সঠিক ভাবে বলা দুরুহ। তবে যতদুর জানা যায় এই ইউনিয়নটিতে প্রায় ৭০০/৮০০ বছরের ইতিহাস । এই সুদীর্ঘ সময়ে এখানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি। যারা এই দেশের স্মরণীয় হয়ে আছে তাদের কাজের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে ডাঃ হরগোপাল পাল, রাধা বিনোদ পাল, পল্পী কবি রওসন আলি, কবি আজিজুর রহমান, খান বাহাদুর হারুন-অর রশিদ, মামুনর-রশিদ, বিচারপ্রতি রহুল আমিন, আফজাল সরকার মধু প্রামানিক, চাঁদ প্রামানিক, আবুল কাসেম, রজব আলি খান চৌধুরী, রেজওয়ান আলী খান চৌধুরী, তাজুল ইসলাম মন্ডল হাজী রহমতউলস্না ফরাজী প্রমুখ। আমাদের এই ইউনিয়টি পদ্মা-গড়াই নদী বেষ্টিত একটি সবুজ শ্যামল আদর্শ গ্রাম। জনশ্রতি থেকে যতটুকো জানা যায় প্রাচীন কালে এই এলাকাটি ছিল দ্বীপাঞ্চল। যার নাম ছিল কাকদ্বীপ। সম্ভবতঃ জনবসতি গড়ে উঠার আগে ঝাউ, বাবলা, তাল পাতায় ভরপুর ছিল এই এলাকাটি। প্রচুর কাক বাস করত এই গ্রামে তাই এর নাম করণ করা হয় কাকদ্বীপ। কারো কারো মতে বাদশা শাহাজানের সময় সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে কুষ্টিয়ার অসিত্মত্বের কথা জানা যায়। যা আজ হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের অমত্মর্গত পুরাতন কুষ্টিয়া। এখানে গড়ে উঠে একটি বড় শহর। যাকে বলা হত মহানগর। এই এলাকায় গড়ে উঠেছিল অনেক ব্যবসায়কি প্রতিষ্ঠান ’’বন্দর’’। ব্যবসার কাজে বিভিন্ন এলাকার দুর দুরামত্ম থেকে মানুষ আসত এই এলাকায়। চাহিদার প্রেক্ষিতে এখানে বসতি স্থাপন করে বিভিন্ন পোশার মানুষ যাদের মধ্যে পানচাষী, পান বিক্রেতা, কামার, কুমার, তাঁতী, ছাতিয়া, জেলে, তেলি, মুচি, মেথর, ডোম, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যবসাীয় সহ প্রভূতি। এই এলাকায় প্রচুর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করত। জানা যায় এই এই জায়গাটি সম্রাট শাহজাহান এর আমলেই পদ্মার গ্রাসে বিলিন হয়ে যায়। তখন শুধু জল আর জল।

কিছুদিনের মধ্যে শুরুহয় বসতি স্থাপনের বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এসে এখানে বসতি স্থাপন করতে শুরুকরে। যার মধ্যে হিন্দু ধর্মের মানুষই বেশি। সেই সময় পরবর্তীতে কালে পদ্মা নদী তার গতি পরিবর্তন করে পাবনার সাথিয়ার দিকে প্রবাহিত হলে আবারো জেগে উঠে চর ’’চুয়াপাড়ায়’’ গড়ে উঠে জমকালো একটি নৌ-বন্দর। বড় বড় জাহাজ চলাচল করত এই পথে। পাবনা বাজিতপুর ঘাট থেকে প্রতিদিন আসত একটি স্টিমার। এই সময় এই এলাকায় হিন্দু ধর্মের মানুষের প্রভাব বাড়তে থাকে। এই সময় এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন ’’সাধক একদিল শাহ’’। তার প্রচার প্রচারনায় অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে শুরুকরে। তৈরী হতে থাকে মসজিদ শুরুহয় আযান দেওয়া এবং তখন থেকে শুরু হয়, হাজি রহমতউল্লা ফারাজীর উদ্যোগে তৈরী হয় ফরাজী পাড়া জামে মসজিদ। সেই সময় বারো মাসে তের পুঁজা নিয়ে মেতে উঠত হিন্দু মুসলমান সবাই। এদের টাকা পয়সা খাবারের কোন অভাব ছিল না, এই এলাকার মানুষ ছিল খুবই সুখী। সেই সময় খেলাধুলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খুব সুনাম ছিল এই এলাকায়। কুসিত্ম হাডুডু, লাঠিখেলা, গাদন খেলা, ফুটবল, পাশা, নৌকা বাইচ, যাত্রা, নানা প্রভূতিতে সমৃদ্ধ ছিল এই এলাকাটি। এই এলাকায় মানুষরা ছিল অনেক শক্তিশালী। এরা কুসিত্ম খেলার ছিল খুবই পারদর্ষী। যারা কুসিত্ম খেলত তাদেরকে বলা হত মাল। এখানে আয়োজন করা হইত অনেক বড় বড় কুসিত্ম খেলা। অনেক দুর দুরামত্ম থেকে মানুষ আসত কুসিত্ম খেলতে। কুসিত্ম খেলা জন্য এই এলাকার খুব সুনাম ছিল। বয়না মাল নামে একজনের নাম জানি।

পুরাতন কুষ্টিয়াতে অনেক বার হাট বসত। পরবর্তীতে এই বাজারটি হাটপুর বাজারে স্থানামত্মর হয়। হরিপুর বাজারে থেকে আমরা দেখেছি শুক্রবার ও সোমবার হাট বসত। দুর দুরামত্ম থেকে মানুষ এই হাটে বিভিন্ন সামগ্রিক কিনতে ও বিক্রয় করতে আসত। হাটের দিন অনেক দুর থেকে শোনা যেত মানুষের গুনজন আওয়াজ। বর্ষার সময় পদ্মা নদীর পানির ঢেউ এর আওয়াজ কয়েক মাইল দূর থেকে শোনা যেত। এই সময় এই নদী দিয়ে অনেক বড় বড় লঞ্চ, স্টীমার, ফেরী যেত।

জানা যায় ১৮০০ সালের দিকে চাঁদ প্রামানিক মধু প্রামানিক দুই ভাই কুমারখালীর, ধোকরার কোল থেকে এসে এখানে বসতি স্থাপন করে। তার আগে থেকেই এখানে বসতি ছিল। মধু প্রামানিক খুব ধার্মিক লোক ছিলেন। পুরাতন কুষ্টিয়াতে একটি মাত্র মসজিদ ছিল, তিনি সেখানে নামাজ পড়তে যেতেন। সেই সময় মসজিদের ঠিক দক্ষিণ পাশে একটি ক্যানেল ছিল, বর্ষাকালে এখানে পানি হয়ে যেত যার ফলে মধু প্রামানিকের মজজিদে যেতে কষ্ট হত। তিনি এখানে একটি বাঁশের সাঁকো বানান। পরবর্তীতে সেই খানে একটি তিনি পাঁকা কালভার্ট তৈরী করেন। যা আজও বিদ্যমান।

এই ইউনিয়নে অনেক কবি সাহিত্যকের জন্ম হয়। অনেকে পুথি পাঠ করতে পারতেন। অনেকে পালাগান গেয়ে বেড়াতেন, অনেকে নিজের লেখা গান লিখা কবিতা বিভিন্ন আসরে পাঠ করে সবার কাছে অত্যমত্ম ভালোবাসা অর্জন করতেন।

আমরা দেখেছি এই পদ্মা, গড়াই নদীতে বড় বড় পালতোলা নৌকা যেত। অনেক সময় মাঝিরা গুন বেয়ে নৌকা টেনে নিয়ে যেতেন। জেলেরা মাছ ধরতেন। বর্ষাকালে সখের বষে অনেকে বাঁশের ধোয়ার বানিয়ে মাছ ধরতে যেতেন। বর্ষার মৌসুম আসার আগে থেকেই বাড়ি বাড়ি ধোয়ার বানানোর ধুম পড়ে যেত।

এই এলাকায় ঈদের সময় বিশেষ করে মানুষ খুব আনন্দে মেতে উঠত। বিশেষ করে যাত্রা পালার আয়োজন করা হইত। ঈদের ৩০/৪০ দিন আগ থেকেই যাত্রা পালার জন্য শুরু হত প্রস্ত্ততি। কেউ বা নায়ক কেউ বা ভিলেন কেউ বা রাজা, কেউ বিবেক সাজতেন। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় শুরু হত রিয়াসেল’’। অবশেষে ঈদের দিন অনুষ্ঠান করা হত সেই কাঙ্খিত যাত্রা। দূর দুরামত্ম থেকে মানুষ আসত এই যাত্রা পালা দেখতে, যাত্রা দলের বাসির আওয়াজ কয়েক মাইল দূর থেকে শোনা যেত, এই আওয়াজ শুনে কেউ ঘরে বসে থাকতে পারতেন না। চলত কয়েকদিন যাবৎ এই যাত্রা পালা।

সেই সময় ইউনিয়নে খেলাধুলার চর্চা ছিল। বিকাল হলেই মাঠে মাঠে খেলোয়াড় দর্শক ভরে যেত। এই এলাকার ছেলেরা খেলতে যেত বিভিন্ন জেলায় তখনকার দিনে এই এলাকায় ফুটবল টিমের খুব সুনাম ছিল।

এই এলাকায় লাঠিখেলার প্রচলন ও ছিল খুব। প্রায়ই লাঠি খেলা হইত। লাঠি খেলার বাজনার আওয়াজে মানুষ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চলে আসত খেলা দেখতে তাদের ছন্দময় খেলায় সবার মন ভোরে উঠত।

এই ইউনিয়নের পুরাতন কুষ্টিয়াতে স্থাপন করা হয়েছিল নীল কুঠি। চাষ করা হইত নীল। এখানে হাজার হাজার মানুষের উপর করা হইত অত্যাচার। সেই দুঃখময় স্মৃতি বহন করে আজও রয়ে গেছে পদ্মা নদীর পারে সেই নীল কঠির অংশ বিশেষ।

১৮০০ সালে দিকে এই এলাকায় ছিল জমিদার প্রথা। চাঁদ প্রামানিক ছিল তাদের অন্যতম জমিদারদের বাড়িতে ছিল ধান রাখার শতশত গোলা। কাজ করতঃ শতশত মানুষ। জমিদারদের প্রজারা খুবই সমিহ করে চলত। সেই সব আজ শুধু স্মৃতি আর স্মৃতি।